এস এ মিশন, সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি: গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জে এক মামলার বাদীর সঙ্গে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় গ্রামবাসির হাতে এক এএসআই আটকের পর প্রত্যাহার হয়েছে।

এ ঘটনার পর লাঞ্ছিত ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে অর্ধশতাধিক গ্রামবাসির বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করেছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।

রোববার সন্ধ্যায় মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহিল জামান।

গ্রেফতাররা হলেন- সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের আবদুল খালেক, আমজাদ আলী, সুমন মিয়া, বকুল মিয়া, মুকুল মিয়া, জহুরুল ইসলাম, শাহজাহান আলী, আবদুর রাজ্জাক, হামিদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, নাজমুল হক ও রাজু মিয়া।

এজাহারে বলা হয়, গত ২৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ধর্মপুর (ছড়ারপাতা) গ্রামের এক মামলার বাদির গাছ জোরপূর্বক কেটে নেয়ার অভিযোগ পেয়ে কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এএসআই তোফাজ্জল হোসেন সাদা পোশাকে তার বাড়িতে যান। পরে বাদির অভিযোগ শুনে আসার সময় ওই নারীর ভাশুর মাসুদ মিয়া তোফাজ্জলকে অশালীন ভাষায় গালমন্দ করেন। এরপর চিৎকার করে এলাকাবাসিদের একত্রিত করে তোফাজ্জলকে আটক করে উঠানের আম গাছে বেঁধে ফেলেন।

এরপর মাসুদসহ কয়েকজন তোফাজ্জলকে বেধরক মারপিট করে। তাছাড়া তার পকেটা থাকা নগদ টাকা ও হাতঘড়ি লুট করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

খবর পেয়ে কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্তকেন্দ্র ও সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে যায়। পরে উত্তেজিত জনতা তাদের উপরেও হামলার প্রস্তুতি নেয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তোফাজ্জলকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এ ঘটনার পরদিন দুপুরে অভিযুক্ত পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তোফাজ্জল হোসেনকে ক্লোজড করে গাইবান্ধা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

এদিকে, শনিবার এ ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে গুজব, মারপিট ও অর্থ ছিনিয়ে নেয়াসহ সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ এনে কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বাদি হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় ২০ জন নামীয় ছাড়াও ওই গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে ।

তবে গ্রামবাসির অভিযোগ, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ছড়ারপাতা গ্রামের এক সৌদিপ্রবাসীর বাড়িতে যান তোফাজ্জল। কিছু সময় পর ওই প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে গোয়ালঘরে ‘আপত্তিকর’ অবস্থায় তাকে দেখে ফেলেন এক প্রতিবেশী। খবর পেয়ে তোফাজ্জলকে আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে পুলিশে খবর দেয় গ্রামবাসী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘কিছুদিন আগে ওই নারীর ভাশুরের সঙ্গে তার স্বামীর জমি নিয়ে বিরোধ হয়। স্বামী প্রবাসে থাকায় এই ঘটনায় ভাশুরের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই নারী। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান এএসআই তোফাজ্জল। তদন্তের খাতিরে ওই গৃহবধূর বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল তার। সেই থেকে তাদের সখ্য গড়ে ওঠে।’

মামলার বাদি কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে পুলিশ সদস্যকে আটকের পর গাছে বেঁধে নির্যাতন, অর্থ-সরঞ্জাম লুট, বাকি সদস্যদের উপর হামলার প্রস্তুতিসহ সরকারি কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ মামলায় ১৩ জনকে গ্রেফতারের পর আদালতে নেয়া হয়েছে। আসামিদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছি। এছাড়া বাকি আসামিদের গ্রেফতারসহ ঘটনার তদন্ত চলছে।’